ইউক্লিড | Euclid
ইউক্লিড একজন গ্রিসের বিখ্যাত গণিতজ্ঞ । ইউক্লিডকে জ্যামিতির জনক বলা হয়। তিনার লেখা বই গুলির মধ্যে কেবল তিনটি বই এর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। এগুলো হচ্ছে-
ডাটা, অপটিক্স , এলিমেনটস ।
প্রায় 280 খ্রিস্ট পূর্বে তিনি ELEMENTS বই টি 13 টি খণ্ডে লেখেণ। পাটিগণিতের মূল নিয়মাবলী, জ্যামিতি, গাণিতিক রাশি ও গাণিতিক সংকেত, সংখ্যাতত্ত্বসহ গণিতের বিভিন্ন শাখায় তার অবদান রয়েছে। অমূলদ রাশির আবিষ্কার গ্রিক গণিতকে যে সংকটে ফেলেছিল তা থেকে উদ্ধার পেতে পাটিগণিত জ্যামিতির দিকে ঝুঁকে পড়েছিল আর ইউক্লিডের গণিতেরও অনেকটাকেই বলা যেতে পারে জ্যামিতিক বীজগণিত। তার প্রধান বৈজ্ঞানিক গ্রন্থ ইউক্লিড’স এলিমেন্টস। এতে আলোচনা আছে তলমিতি ও ঘ্নমিতি এবং সংখ্যাতত্ত্বের বিভিন্ন সমস্যা যেমন অ্যালগরিদম নিয়ে।
ইউক্লিড সামতলিক ও ঘন জ্যামিতির 467 টি উপপাদ্য সংগ্রহ করেন কয়েকটি ধরে নেওয়া ধারনার উপর নির্ভর করে । ইউক্লিডের জ্যামিতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো— কতকগুলো ব্যাপার বিনা প্রমাণে মেনে নিতে হবে। তাদের বলা হয় স্বতঃসিদ্ধ । অর্থাৎ এগুলো ধ্রুব সত্য। অঙ্ক দিয়ে এর কোনো প্রমাণ দেওয়া যাবে না, অর্থাৎ বুদ্ধিতে যার ব্যাখ্যা মেলে না। এগুলিকে বলা হয় ইউক্লিডের স্বীকার্য ( Postulate ) এবং স্বতঃসিদ্ধ ( Axiom ) ।
যেমন : ইউক্লিডের একটি সিদ্ধান্ত হলো—কোনো একটি সরল রেখার বহিঃস্থ কোনো বিন্দু থেকে একটিমাত্র সমান্তরাল সরলরেখা আঁকা যেতে পারে। ইউক্লিডে বলেন,
z বিন্দুর ভেতর দিয়ে XY সরলরেখার সমান্তরাল একটিমাত্রই সরলরেখা আঁকা যায়। যা পরবর্তী ক্ষেত্রে সর্বত্র প্রযোজ্য হয় না । এরফলে অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতির প্রয়োজন হয় । ইউক্লিড নিজেই এ ব্যাপারটির একটি যুক্তিসঙ্গত প্রমাণ খাড়া করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু পারেননি।
পরবর্তীকালে অন্যান্য গণিতজ্ঞেরাও অনেক চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তাঁরাও ইউক্লিডের মতোই ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে ইউক্লিডের সেই ধ্রুব সত্যগুলো ধ্রুবই রয়ে গেছে।
অঙ্কশাস্ত্র বিষয়টি সত্যি খুব কাঠখোট্টা। কিন্তু এমন নীরস বিষয়ের প্রতিই ইউক্লিডের প্রচণ্ড আগ্রহ ছিলো । তিনি যখন আলেকজান্দ্রিয়ায় জ্যামিতিশাস্ত্র নিয়ে গ্রন্থ রচনা এবং গবেষণা করছিলেন সারা দেশ জুড়ে তখন তিনার ব্যাপক খ্যাতি ছিলো । এমনকি স্বয়ং সম্রাট টলেমিও তিনার গুণমুগ্ধ এবং অনুরাগী ভক্ত ছিলেন। ইউক্লিডের কাছে মাঝেমধ্যে সম্রাট টলেমীও এই জ্যামিতি শেখার চেষ্টা করতেন । কিন্তু এই জ্যামতির জটিল সব তত্ব সম্রাটের মাথায় সহজে ঢুকতোনা । তাই তিনি একদিন ইউক্লিডকে বলে ফেলেছিলেন, আচ্ছা, আপনার বইয়ে জ্যামিতির সূত্র যেভাবে লিখেছেন, এর চেয়ে সহজভাবে লিখবার বা বোঝবার কোনো পথ নেই ?
সম্রাটের প্রশ্ন শুনে মহাজ্ঞানী ইউক্লিড সবিনয়ে বলেছিলেন,-না, মহারাজ। রাজাদের জন্যও জ্যমিতিতে কোনো সহজ উপায় তৈরি হয়নি। জ্ঞানার্জনের জন্য রাজকীয় পথ বলে কিছু নেই (In Geometry there is no shortcut for kings. There is, Sir, no royal road to learning)
ইউক্লিডের এই কথাটি ইতিহাসের পাতায় আজো অমর হয়ে আছে।
ইউক্লিডের স্বীকার্যঃ| Euclid’s Postulate:
স্বীকার্য কাকে বলে? | What is Postulate?:
গণিতে কোনো কিছু যুক্তি দিয়ে প্রমানের আগে কতগুলি জ্যামিতিক সত্য বিবৃতি লিখবো যেগুলি আমাদের প্রমানের যুক্তি তৈরি করতে ও অঙ্কন করতে কাজে লাগবে। এগুলো ধ্রুব সত্য। অঙ্ক দিয়ে এর কোনো প্রমাণ দেওয়া যাবে না, অর্থাৎ বুদ্ধিতে যার ব্যাখ্যা মেলে না। এই বিবৃতিগুলিকে আমরা স্বীকার্য বলবো ।
ইউক্লিডের স্বীকার্যঃ
ইউক্লিডের স্বীকার্য 1ঃ
দুটি বিন্দু দিয়ে একটিই মাত্র সরলরেখা আঁকা যায় । |
ইউক্লিডের স্বীকার্য 2ঃ
একটি সরলরেখাংশকে উভয়দিকে যত ইচ্ছে বাড়ানো যায় । |
ইউক্লিডের স্বীকার্য 3ঃ
যেকোনো বিন্দুকে কেন্দ্র করে এবং যেকোনো দৈর্ঘ্যের ব্যাসার্ধ নিয়ে একই সমতলে একটি মাত্র বৃত্ত অঙ্কন করা যায় |
ইউক্লিডের স্বীকার্য 4ঃ
যে কোনো দুটি সমকোণের পরিমাপ সমান । |
ইউক্লিডের স্বীকার্য 5ঃ
একটি সরলরেখার বাইরের কোনো বিন্দু দিয়ে ওই সরলরেখার সমান্তরাল একটিই মাত্র সরলরেখা আঁকা যায় । |
এলিমেনটস | Elements:
যদিও এলিমেন্টস এর বহু কাজই পূর্বতন গণিতবিদরা সম্পন্ন করেছেন, তবুও ইউক্লিডের বিশেষত্ব ছিল এই কাজগুলো একত্রীকরণে। তিনি বিচ্ছিন্ন কাজগুলোকে জড়ো করে একক গ্রন্থে প্রাসঙ্গিকভাবে সাজিয়ে দেয়ায় যেকোনো কাজের তথ্যসূত্র উদ্ধৃতিকরণ সহজ হয়ে যায়। ২৩ শতাব্দী পরও তাই গাণিতিক প্রমাণগুলো যথাযথভাবে গণিতের ভিত্তি হয়ে রয়েছে।
এলিমেন্টস এর প্রথম দিকের প্রতিলিপিগুলোয় ইউক্লিডের নাম আসেনি, বরং অধিকাংশ প্রতিলিপিতে বলা হয়েছে সেগুলো “থিওনের সংস্করণ থেকে” অথবা “থিওনের বক্তৃতামালা”। ভ্যাটিকানে সংরক্ষিত যে প্রতিলিপিটিকে প্রাথমিক সময়ের প্রতিলিপি বলে ধরা হয় সেটায় কোনো লেখকের নাম উল্লেখ নেই। ইউক্লিড এলিমেন্টসের রচয়িতা বলে একমাত্র যে তথ্যসূত্রটি পাওয়া যায় তার নাম প্রোক্লুস, যিনি তার কমেন্টারি অন দ্যা এলিমেন্টস বইতে ইউক্লিডকে এর লেখক হিসেবে আরোপ করেছেন।
যদিও এলিমেন্টস এর জ্যামিতির জন্য সর্বাধিক পরিচিত, সংখ্যাতত্ত্বও এর অন্তর্গত যেখানে পারফেক্ট নাম্বার ও মার্জেন প্রাইমের মধ্যকার সম্পর্ক এবং গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক বের করার ইউক্লিডীয় এলগরিদম বর্ণনা করা হয়েছে। দীর্ঘকাল ধরে এলিমেন্টস এ বর্ণিত জ্যামিতিই ছিল জ্যামিতি বলতে যা বোঝায় তার সবকিছু। কিন্তু উনবিংশ শতাব্দীতে অ-ইউক্লিডীয় বা ত্রিমাত্রিক জ্যামিতির আবির্ভাব হলে এলিমেন্টস এর জ্যামিতিজ্ঞানকে ইউক্লিডীয় জ্যামিতি নামে আখ্যায়িত করা হয়।
ALSO SEE –
গণিতের বিষয়ে আরো জানতে visit – Study with MD