গুণ ( প্রাথমিক গণিত ) | Multiplication (Elementary Math )

অঙ্কশাস্ত্রের চারটি মৌলিক ক্রিয়ার মধ্যে গুণ (বা গুণন) একটি, যেখানে অন্য তিনটি ক্রিয়া হলো যোগ, বিয়োগ এবং ভাগ । গুণকে সচরাচর আড়াআড়ি ক্রশ চিহ্ন “×” দ্বারা সূচিত করা হয়। এছাড়া গুণে ব্যবহৃত সংখ্যা বা চলকগুলোর অভ্যন্তরে বিন্দু “.” বসিয়ে, চলকের ক্ষেত্রে একে অপরকে পাশাপাশি বসিয়ে এবং কম্পিউটারের ক্ষেত্রে সংখ্যার মধ্যে তারাচিহ্ন “*” বসিয়ে গুণকে নির্দেশ করা হয়ে থাকে।

এই গুণ সমস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়েই শেখানো হয় ।

  • গুণের নামতা
  • এক অঙ্কের গুণ
  • দুই অঙ্কের গুণ
  • তিন অঙ্কের গুণ

এইগুলো সবই প্রাথমিক বিদ্যালয়েই শেখানো হয় ।

>গুণের গাণিতিক প্রকাশঃ

আমরা ধরি “a” এবং “b” দুটি সংখ্যা , এই দুটি সংখ্যার আমরা গুণ করবো । আরো ধরি এই দুটি সংখ্যাকে গুণ করে যে সংখ্যা পাবো সেটি হলো “c” । তাহলে আমরা গাণিতিক ভাবে গুণ প্রকাশ করবো নিম্নরূপ ভাবে-

a × b = c

>গুণঃ যোগের সংক্ষিপ্ত রূপ

অঙ্কশাস্ত্রের চারটি মৌলিক ক্রিয়ার মধ্যে যেমন  গুণ (বা গুণন) একটি , তেমনি যোগ হচ্ছে অপর একটি মৌলিক ক্রিয়া ।

একটি সংখ্যা ৫/5 ( ধরি ) -কে আমরা ৪ বার যোগ করবো ।

অতএব , ৫ + ৫ + ৫ + ৫

এভাবে আমরা পরপর একটা একটা করে যোগ করি।

আবার একটি সংখ্যা ৬ কে আমরা ৭ বার যোগ করবো

অতএব , ৬ + ৬ + ৬ + ৬ + ৬ + ৬ + ৬

এভাবে আমরা পরপর বসিয়ে একটা একটা করে যোগ করি ।

কিন্তু যখন একটি সংখ্যাকে বহুবার যোগ করার দরকার পড়ে যেমন –

  • ১২ কে ১২০ বার যোগ
  • ৫ কে ৪২৫ বার যোগ
  • ৮০ কে ৬০০০ বার
  • ১০০ কে ৫৭৬১ বার

ইত্যাদি ক্ষেত্রে যোগ করাটা বেশ কষ্টকর হয়ে পড়ে ।

এই কষ্ট কে কম করার জন্যেই গুনের প্রয়োজন পড়ে ।

যেখানে আমরা ৫-কে ৪ বার যোগ করতে গিয়ে একটা একটা করে যোগ করতে হচ্ছিলো ,সেখানে ৫×৪=২০ আমরা সহজেই পেয়ে যাবো।

যোগগুণ
৫ কে ৪ বার যোগ৫ + ৫ + ৫ + ৫
= ১০ + ৫ + ৫
= ১৫ + ৫
=২০
৫×৪=২০
৬ কে ৭ বার যোগ৬ + ৬ + ৬ + ৬ + ৬ + ৬+ ৬
= ১২ + ৬ + ৬ + ৬ + ৬ + ৬
= ১৮ + ৬ + ৬ + ৬ + ৬
= ২৪ + ৬ + ৬ + ৬
= ৩০ + ৬ + ৬
= ৩৬ + ৬= ৪২
৬ × ৭ = ৪২
৮ কে ১২ বার যোগ৮ + ৮ + ৮ + ৮ + ৮ + ৮ + ৮ + ৮ +৮ + ৮ + ৮ + ৮
= ১৬ + ৮ + ৮ + ৮ + ৮ + ৮ + ৮ + ৮ + ৮ + ৮ + ৮
= ২৪ + ৮ + ৮ + ৮ + ৮ + ৮ + ৮ + ৮ + ৮ + ৮
= ৩২ + ৮ + ৮ + ৮ + ৮ + ৮ + ৮ + ৮ + ৮
= ৪০ + ৮ + ৮ + ৮ + ৮ + ৮ + ৮ + ৮
= ৪৮ + ৮ + ৮+ ৮ + ৮ + ৮ + ৮
= ৫৬ + ৮ + ৮ + ৮ + ৮ + ৮
= ৬৪ + ৮ + ৮ + ৮ + ৮
= ৭২ + ৮ + ৮ + ৮
= ৮০ + ৮ + ৮
= ৮৮ + ৮
= ৯৬
৮ × ১২ =৯৬

> গুনের বিনিময়যোগ্যতা | Commutative Property Of Multiplication :

অঙ্কশাস্ত্রের চারটি মৌলিক ক্রিয়ার মধ্যে একটি হলো যোগ যা বিনিময় নিয়ম মেনে চলে অর্থাৎ ,

  • ৮ + ৩ = ৩ + ৮ = ১১
  • ১০ + ৬ = ৬ + ১০ = ১৬
  • ৫০ + ৪৩ = ৪৩ + ৫ ০ = ৯৩

গুণ যাকে বলা হয় যোগের সংক্ষিপ্ত রূপ।

অতএব ,গুণের প্রধান একটি ধর্ম হলো এর বিনিময়যোগ্যতা, যা এ কথাই বলে যে, ৪-এর তিনটি অনুলিপির যোগের যে ফলাফল বের হবে, ৩-এর চারটি অনুলিপির যোগেও সেই ফলাফলই পাওয়া যাবে। অর্থাৎ, “৩ দিয়ে ৪-কে গুণ” এবং “৪ দিয়ে ৩-কে গুণ” করা সমার্থক।

  • ৩ × ৪= ৪ × ৩ = ১২
  • ৪ × ৫ = ৫ × ৪ = ২০
  • ৬ × ৭ = ৭ × ৬ = ৪২

>গুণের সংকেত ও ব্যবহারঃ

সংকেতব্যবহার
×এই সংকেত টি সাধারণত পাটিগণিতের গুণ করার সময় ব্যবহৃত হয়
.গুণ চিহ্ন × এবং বহুল ব্যবহৃত চলক ” x ” এর মধ্যে বিভ্রান্তি কমাতে, গুণকে ডট (বিন্দু) চিহ্ন দ্বারাও চিহ্নিত করা হয়
*কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে গুণকে নির্দেশ করার ক্ষেত্রে তারকাচিহ্ন ব্যবহার করা হয় ।

>বীজগাণিতিক ক্ষেত্রে গুণের ব্যবহারঃ

বীজগণিতে চলক-সংশ্লিষ্ট গুণনের ক্ষেত্রে প্রায়শই চলকগুলোকে পাশাপাশি বসিয়ে বা পরস্পর সন্নিবিষ্ট করে লেখা হয়, যাকে অন্তর্নিহিত বা অব্যক্ত গুণও বলা হয় ।

যেমন: xy-এর গুণকে xy, x-এর পাঁচ গুণকে বা 5 ও x-এর গুণকে 5x আকারে লেখা।

বন্ধনী দ্বারা বেষ্টিত রাশির ক্ষেত্রেও এই সংকেতায়ন ব্যবহার করা যেতে পারে।

যেমন: ২-এর ৫ গুণকে লেখার ক্ষেত্রে ৫(২) অথবা (৫)(২) লেখা।

বন্ধনী দ্বারা বেষ্টিত চলকের নাম ফাংশন নামের সাথে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে। ফলে যেসব ক্ষেত্রে কিছু কিছু চলককে একাধিক বর্ণের সমন্বয়ে লিখতে হয়, সেই চলকগুলোর নাম অন্য চলকের নামের সাথে মিলে গেলে গুণের এই অন্তর্নিহিত ব্যবহার অস্পষ্টতার কারণ হতে পারে। আবার, গাণিতিক ক্রিয়ার সঠিক অনুক্রম নির্ধারণের বেলায়ও গুণের এই অন্তর্নিহিত ব্যবহার অস্পষ্টতা ঘটাতে পারে।

Leave a Comment